Blog

03 Apr 2020

Author: Md. Sultan Mahmud

করোনায় সমন্বিত ত্রান ব্যবস্থাপনা

বিশ্বব্যাপী অনেকগুলো দেশে করোনা মহামারি আকার ধারন করেছে, যার ছোয়া বাংলাদেশেও লাগতে শুরু করেছে। এটা যেন দেশে মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়তে না পারে তার জন্য সরকার ২৬ মার্চ থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারন ছুটি ঘোষণা করে যা পরবর্তীতে ১১ এপ্রিল পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত সরকারী হিসেবে দেশে ৬ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেনএবং সংবাদমাধ্যমের সূত্র ধরে ঐ একই রকমের উপসর্গ নিয়ে প্রায় ৪০ জন মারা গেছেন। শুরু থেকে ঢাকায় অবস্থিত রোগতত্ত্ব রোগ নিয়ন্ত্রন ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) এই পরীক্ষা করে আসছে যা এখন দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আরও কয়েকটা বিভাগীয় এবং জেলা শহর পর্যায়ে সম্প্রসারিত করা হয়েছে এবং সবশেষ খবর অনুযায়ী উপজেলা থেকে প্রতিদিন দুটি করে স্যাম্পল সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে করোনা সংক্রান্ত রোগ নির্ণয় এবং ব্যবস্থাপনার বাইরে আরও কিছু বিষয় গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠছে। দেশের অর্থনীতিতে করোনার প্রভাব কতটুকু পড়বে তা হয়তো সময়ই বলে দেবে কিন্তু দেশের এই টানা ছুটিতে এখনই বিপদে পড়েছেন দিন আনে দিন খাওয়া মানুষ এবং তাদের পরিবার। করোনার মোকাবেলার জন্য সময়োপযোগী সাধারন ছুটি এবং বাইরে বের হওয়ার নিষেধাজ্ঞা থাকায় তারা পারছেন না তাদের কাজে যেতে সুতরাং তাদের আয় বন্ধ। তার সাথে বিপদে পড়েছেন নিম্নমধ্যবিত্ত যাদের অবস্থা দিন এনে দিন খাওয়ার মতো না হলেও মাস এনে মাস খাওয়ার মতো। তার মরার উপর খাঁড়ের ঘায়ের মতো এসে পড়েছে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। এই পরিস্থিতিতে দেশের অন্যান্য দুর্যোগের ন্যায় সরকারের বিভিন্ন সংস্থা থেকে শুরু করে বিভিন্ন বেসরকারি ও সামাজিক সংগঠন এবং ব্যক্তিপর্যায়ে ত্রান বিতরণ শুরু হয়েছে।

যেহেতু এই দুর্যোগ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের থেকে আলাদা সুতরাং তার ত্রান ব্যবস্থাপনা সমন্বিতভাবে করতে না পারলে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা আমাদের জন্য যেমন কঠিন হবে তেমনি এটা এই চলমান দুর্যোগের ভেতর নতুন দুর্যোগ তৈরি করতে পারে। আমাদের দেশে আমরা যে সকল দুর্যোগের সাথে পরিচিত তাতে সাধারণত একটা নির্দিষ্ট ভৌগলিক এলাকা আক্রান্ত হয়। কিন্তু এক্ষেত্রে সারা দেশেই একই সতর্কতা থাকায় কার্যত দেশব্যাপী আক্রান্ত এবং সেই অনুযায়ী সারা দেশজুড়েই আমাদের ত্রান কার্যক্রম চালাতে হবে। আরও একটা বিষয় গুরুত্বপূর্ণতা হচ্ছে ত্রান কার্যক্রমের সময়কাল। সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী এখন পর্যন্ত ১১ এপ্রিল পর্যন্ত সাধারণ ছুটি বলবত আছেযা পরিস্থিতি সাপেক্ষে অনির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাড়তেও পারেআগাম সতর্কতা হিসেবে যার চিন্তা আমাদের এখনই করে রাখা ভালো। সবকিছু বিবেচনা করে সারা দেশেই সমন্বিতভাবে একটা নির্দিষ্ট পদ্ধতি অনুযায়ী ত্রান কার্যক্রম চালাতে হবে যেন কেউ বাদ না পড়ে।

প্রায় প্রতি বছরই বন্যা এবং ঘূর্ণিঝড় সফলতার সাথে মোকাবেলা করার জন্য আন্তর্জাতিক অঙ্গনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় বাংলাদেশর একটা সুনাম আছে। সাথে সাথে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা বিষয়ক বিভিন্ন পরিকল্পনা এবং ম্যানুয়াল তৈরিতেও বাংলাদেশ অগ্রগণ্য ভূমিকা পালন করেছে। এর মধ্যে একটা গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্ট ২০১০ সালে প্রকাশিত“এসওডি Standing Orders on Disaster (SOD)  যা পরবর্তীতে দুর্যোগ বিষয়ক স্থায়ী আদেশাবলী ২০১৯ নামে প্রকাশিত হয়েছে। এই ডকুমেন্টে জাতীয় থেকে জেলা উপজেলাসিটি কর্পোরেশনপৌরসভা এবং ইউনিয়ন পর্যন্ত দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন এবং দুর্যোগের বিভিন্ন পর্যায়ে কিভাবে কাজ করতে হবে তা বলা হয়েছে। বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে কিছু এলাকায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি গঠন করা হয়েছে কিন্তু বিভিন্ন দুর্যোগে তাদের কার্যক্রম সেভাবে চোখে পড়েনি। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা নিয়ে যারা কাজ করেন তাদের বাইরে দেশের মানুষের এই বিষয়টা নিয়ে কোন ধারনা আছে বলে কখনও মনে হয় নি। এবার আমাদের সুযোগ ছিলো সেটাকে অপারেশনালাইজ করা বা দেখা যে এটা দুর্যোগের সময় কতোটুকু কার্যকর।

সামগ্রিকভাবে সমন্বিত ত্রান কার্যক্রমের জরুরী গুরুত্ব বিবেচনা করে গত ২৯ মার্চে সকল জেলা প্রশাসক বরাবর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রান মন্ত্রনালয়ের সিনিয়র সচিব স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে তালিকা তৈরি করে ত্রান বিতরণ করতে বলা হয়েছে। সেখানে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুযায়ী যে সকল কর্মজীবী মানুষ কর্মহীন হয়ে খাদ্য সমস্যায় আছে তাদের তাদের সিটি কর্পোরেশন/পৌরসভা/ইউনিয়ন পর্যায়ে ওয়ার্ড ভিত্তিক তালিকা প্রস্তুত করে খাদ্য সহায়তা প্রদানের নির্দেশনা প্রদান করেছেন। তাছাড়াও দ্বৈততা পরিহার করতে এবং কোন উপকারভোগী যেন বাদ না পড়ে সেজন্য স্থানীয় পর্যায়ে বিত্তশালী ব্যক্তি/ সংগঠন/ এনজিও কোন খাদ্য সহায়তা প্রদান করলে জেলা প্রশাসকগন প্রস্তুতকৃত তালিকার সাথে সমন্বয় করতে বলা হয়েছে। জেলা প্রশাসকগণ ইউএনও এবং জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে তালিকা প্রস্তুত করা এবং ত্রান বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে দিয়েছেন।

করোনা মোকাবেলায় জন্য জনসমাগম এড়িয়ে শৃঙ্খলভাবে এই কার্যক্রম চালানো প্রয়োজন। বিভিন্ন জাতীয় স্থানীয় পত্রিকার অনলাইন ভার্সনের খবর এবং ফেসবুকের পোষ্টে সারা দেশেই বিভিন্ন ত্রান কার্যক্রমের খবর ভেসে আসছে এবং ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে অনেকেই এগিয়ে আসছেন সেই কার্যক্রমে অংশ নিতে। ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে ত্রান বিতরনের ক্ষেত্রে অনেক ক্ষেত্রেই এলাকা ভিত্তিক জরিপ না করে নির্দিষ্ট সংখ্যা ভিত্তিক ত্রান পরিচালনা করা হয়ে থাকে যা অনেক বিশৃঙ্খলা তৈরি করতে পারে এবং অনেক ক্ষেত্রেই সামাজিক দূরত্ব বজায় থাকছে না। সামগ্রিকভাবে এই পর্যায়ে মাননীয় সিনিয়র সচিব মহোদয়ের চিঠিতে নির্দেশিত সমন্বিতভাবে ত্রান কার্যক্রম পরিচালনা করা অতীব জরুরী। তাছাড়া আপনার অজান্তেই অনেকেই বাদ পড়ে যেতে পারেন এই অতি প্রয়োজনীয় মানবিক সহায়তা থেকে যাদের জন্য হয়তো এই সাহায্য অনেক জরুরী। সুতরাং সবার প্রতি আহ্বান আসুন আমরা সরকারকে এই কার্যক্রমকে সঠিকভাবে পরিচালিত করতে সহায়তা করি । সেক্ষেত্রে সরকারের দায়িত্ব হবে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করে স্বচ্ছতা বজায় রেখে দুর্নীতি এবং রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত ভাবে এই কার্যক্রম পরিচালনা করা। সরকারকে সহায়তা করার পাশাপাশি আমাদের দায়িত্ব হবে নিজ নিজ এলাকার খোজ নেওয়া সবাই এই কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হলো কি নাবা না হলে সংশ্লিষ্টকে অবহিত করা। সবাই বাড়ীতে থাকুনসুস্থ থাকুন।