World Town Planning Day

09 Nov 2019

বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস ২০১৯ উদযাপন

সমগ্র বাংলাদেশের টেকসই ও পরিকল্পিত নগরায়ন নিশ্চিত করার প্রত্যয় নিয়ে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস পালন করছে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স। বিশ্বের নগর সমূহকে সকলের জন্য বাসযোগ্য করবার প্রতিপাদ্য নিয়ে সমগ্র বিশ্বে ০৮ নভেম্বর বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস পালন করা হয়। এবছর বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বি.আই.পি.)-র উদ্যোগে এবং রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও ব্র্যাক - আরবান ডেভেলপমেন্ট প্রোগ্রামের সহযোগিতায় ০৭ থেকে ০৯ নভেম্বর ২০১৯ বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস পালন করা হচ্ছে। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্বাচন করা হয়েছে “জেলা ও উপজেলা শহরের জন্য পরিকল্পনা”।

এবারের তিন দিনব্যাপী অনুষ্ঠানমালায় দেশের নগর, অঞ্চল ও গ্রামীণ পরিকল্পনাবিদ এবং বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এবং পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের নগর ও অঞ্চল/গ্রামীন পরিকল্পনা বিভাগের শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে পরিকল্পনা সম্পর্কিত উদ্ভাবনী ধারণা, নগর পরিকল্পনা ডিজাইন, পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট প্রামাণ্যচিত্র, স্নাতক পর্যায়ের থিসিস, বিতর্ক, পোস্টার এবং আলোকচিত্র প্রতিযোগিতা এবং বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণী, র্যা লী, সেমিনার ইত্যাদি।

বিগত ০৯ নভেম্বর ২০১৯, শনিবার সকালে বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস উপলক্ষ্যে একটি বর্ণাঢ্য র্যা লী আয়োজন করা হয়। র্যা লীতে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের মাননীয় মন্ত্রী জনাব শ ম রেজাউল করিম এমপি। বিশ্ব পরিকল্পনা দিবসের র্যা লী উদ্বোধনড় শেষে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় মন্ত্রী বলেন, সরকারের ভিশন-২০২১ বাস্তবায়নকল্পে একটি সুখী সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার নানাবিধ উন্নয়ন কর্মকান্ড বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে। বর্তমান সরকার দায়িত্ব গ্রহণের পর ঢাকা মহানগরীসহ সকল বিভাগীয় শহর, জেলা ও উপজেলা শহরের পরিকল্পিত উন্নয়নের উদ্যোগ নিয়েছে। আবাসন ও অন্যান্য সংকট নিরসনসহ নাগরিক সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে পরিকল্পিত নগর নিশ্চিতকরণে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারবদ্ধ। তিনি বলেন, আমাদের দেশে ভূমি স্বল্পতার বিষয়টি বিবেচনা করে এখনই ভূমির সঠিক ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য কার্যকর পরিকল্পনা গ্রহণ জরুরী। সীমিত সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের মাধ্যমে পরিকল্পিত আবাসন নিশ্চিতকল্পে সরকারী বেসরকারী পর্যায়ে সকলের সম্মিলিত উদ্যোগ ও অংশগ্রহণ জরুরী। সকলের জন্য পরিকল্পিত উন্নয়ন ফলপ্রসুকরণের স্বার্থে দেশের প্রকৌশলী, স্থপতি ও পরিকল্পনাবিদদের সমন্বিত ভূমিকা রাখতে হবে। এছাড়াও সরকারের ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে বর্তমান সরকার অঙ্গীকারাবদ্ধ বলে তিনি মন্তব্য করেন।

পরিকল্পিত বাংলাদেশ গরবার স্লোগান নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গন থেকে জাতীয় শহীদ মিনার প্রাঙ্গন পর্যন্ত মোট ২৮ কি.মি. দুরত্বে একটি প্ল্যানিং ম্যারাথনে অংশ নেন পরিকল্পনাবিদ এ.বি.এম. সিদ্দীকুল আবেদীন হামীম।

অতঃপর সকাল ১০.০০ টায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে (পূর্ত ভবন, সেগুনবাচিা, ঢাকা) আয়োজিত ‘জেলা ও উপজেলা শহরে জন্য পরিকল্পনা’ শীর্ষক সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার। এছাড়াও সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) ড. কাজী আনোয়ারুল হক।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ। বি.আই.পি.-র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. এ কে এম আবুল কালাম এর সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ইনস্টিটিউটের সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান। এছাড়াও ‘আমার গ্রাম - আমার শহরঃ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিকল্পনা এবং গবেষণা) শেখ মুজাক্কা জাহের।

সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আকতার মাহমুদ । তিনি বলেন বাংলাদেশ সরকারের বর্তমানের নিরবাচনী ইশতেহারের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো আমার গ্রাম আমার শহর। এর মাধ্যমে প্রতিটা গ্রামে নগর সুবিধা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে এই সরকার কাজ করছে। এবং বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স এর সাথে সংগতি রেখে জেলা ও উপজেলা শহরের জন্য পরিকল্পনা কে উপপাদ্য রেখে এ বছরের বিশ্ব নগর পরিকল্পনা দিবস উদযাপনের সিদ্ধান্ত নেয়।আমরা সাধারনত বড় শহরগুলোর পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত থাকি যে জেলা ও উপজেলা শহরের দিকে দৃষ্টি আরোপ করার সময় এসেছে। তাই পরিকল্পিত গ্রামীন উন্নয়নের মাধ্যমে নাগরিক সুবিধার সম্প্রসারণ করে শহরের উপর চাপ কমানও যেতে পারে। অনুষ্ঠানে উপস্থিত নবীন পরিকল্পনাবিদদের উদ্দ্যশে পরিকল্পিত উন্নয়নের বিরাট চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য আহ্বান জানান।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের সচিব বলেন, দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত করতে পরিকল্পনাবিদদের মাধ্যমেই জেলা ও উপজেলা তথ্য সমগ্র দেশের সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রনোয়ন করা প্রয়োজন, তারপর স্থপতি ও প্রকোশলীদের মাধ্যমে তার বাস্তবায়ন করা যেতে পারে। দেশের পরিকল্পিত উন্নয়ন নিশ্চিত করতে তরুন পরিকল্পনাবিদদের এগিয়ে আসবার জন্য আহ্বান জানান তিনি। একইসাথে দেশের নগর ও অঞ্চল পরিকল্পনা আইন’ ২০১৭ দ্রুত কার্যকর হওয়ার প্রয়োজনীয়তার কথা তিনি উল্লেখ করেন। এক্ষেত্রে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে আন্তঃমন্ত্রনালয়ের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সমন্বয়য়ের মাধ্যমে আইনটির অনুমোদন হবার ব্যাপারে তিনি আশাবাদ ব্যাক্ত করেন।

গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব জনাব মোঃ শহীদ উল্লা খন্দকার বলেন দেশের টেকসই উন্নয়ন নিশ্চিত সঠিক পরিকল্পনা প্রনয়নে পরিকল্পনাবিদদের ভূমিকা উপেক্ষা করার অবকাশ নাই। পরিকল্পনাবিদদের অংশগ্রহণ ছাড়া সুষ্ঠু নগরায়ন বা উন্নয়ন কোনটাই সম্ভব নয়। তাদের এবং গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় ও অন্যান্য মন্ত্রানালয়ে পরিকল্পনাবিদদের প্রয়োজন এখন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই মন্ত্রানালয় সারাদেশ ব্যাপী এবং উপজেলা পর্যায়ে কাজ করে যাচ্ছে এবং এর অংশ হিসেবে দেশের ৮টি উপজেলার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এবং খুব শীঘ্রই ময়মনসিংঘ জেলার জন্য বিভাগীয় পর্যায়ে প্ল্যানিং এর আওতায় আনা হয়েছে। এবং আশা করা হচ্ছে এটি সাদেশের জন্য একটি রোল মডেল হিসেবে সমাদৃত হবে। এছাড়াও তিনি বলেন একটি নগরকে সুষ্ঠুভাবে গড়ে তুলতে জনপ্রতিনিধি ও সরকারের সমন্বয়ে স্থানীয় সরকার মিলিতভাবে কাজ করে যাচ্ছে।তিনি উল্লেখ করেন, গ্রামীন উন্নয়নের ক্ষেত্রে নদী প্রবাহ যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল্ক রাখতে হবে। ভুমি ব্যবহারের সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। দেশ ও জাতির উন্নয়নের জন্য প্ল্যানারদের জ্ঞ্যান ও অভিজ্ঞতা সমৃদ্ধ করার মাধ্যমে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।

স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি)-র তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিকল্পনা এবং গবেষণা) শেখ মুজাক্কা জাহের ‘আমার গ্রাম - আমার শহরঃ প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ’ শীর্ষক একটি প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।
স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (উন্নয়ন অনুবিভাগ) ড. কাজী আনোয়ারুল হক বলেন, ‘আমার গ্রাম - আমার শহর’ এই অঙ্গীকার বাস্তাবায়নে শুধু স্থানীয় সরকার নয়, সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। গ্রামীন যোগাযোগ ব্যবস্থা ভালো করার লক্ষ্যে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে, জল প্রবাহ ব্যাহত হচ্ছে। গ্রামীন পরিবেশকে বসবাসযোগ্য রেখে উন্নয়ন কর্মকান্ড পরিচালনা করতে হবে। এর জন্য প্রশিক্ষিত জনবল দরকার। উপজেলা পর্যায়ে পরিকল্পনাবিদদের জন্য পদ সৃষ্টি করতে হবে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স-এর সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, আমরা দিনদিন বসবাস যোগ্যতা হারাচ্ছি। গ্রামগুলোর জন্য পরিকল্পনা করলে, ঢাকা অবসবাসযোগ্য হতো না। সকল বিনিয়োগসমূহ ঢাকা কেন্দ্রিক। এ লক্ষ্যে দেশের সকল পর্যায়ের নগর ও শহর সমূহের ভৌত পরিকল্পনা অনুযায়ী উন্নয়ন ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। এজন্য যে সকল পরিকল্পনা ইতোমধ্যে তৈরী হয়েছে তার দ্রুত গেজেট প্রকাশ করা দরকার এবং যে সকল শহরের মহাপরিকল্পনা এখনও প্রস্তুত করা হয়নি তা দ্রুত সম্পন্ন করে গেজেট আকারে প্রকাশ করা প্রয়োজন। একইসাথে মহাপরিকল্পনা সমূহ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে নগর ও গ্রামীণ স্থানীয় সরকার সমূহকে প্রাতিষ্ঠানিকভাবে শক্তিশালী করা প্রয়োজন এবং পরিকল্পনার আওতায় প্রকল্প প্রস্তাবনাসমূহের বাস্তবায়নের জন্য প্রয়োজনীয় কারিগরী ও আর্থিক সংস্থান সৃষ্টি করা দরকার। একইসাথে জেলা ও উপজেলা শহরের মহাপরিকল্পনা প্রণয়নের লক্ষ্যে সারাদেশে জন্য জাতীয় ভৌত পরিকল্পনা অতি দ্রুত প্রণয়ন করা প্রয়ো্যজন।

বি.আই.পি.-র সভাপতি পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. এ কে এম আবুল কালাম সমাপনী বক্তব্যে বলেন যে, এই দেশের ৬৩% মানুষ গ্রামে বাস করে, কিন্তু তাদের কর্মসংস্থানের অপ্রতুলতার কারনে তারা শহরমূখী হন। আমাদের শহরগুলো সুগঠিত নয় এবং কাঠামোগত দিকে অনেক সমস্যা রয়ে গেছে। এ লক্ষ্যে দ্রুত প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা দরকার। স্থানভিত্তিক মহাপরিকল্পনা প্রস্তুত ও বাস্তবায়নের লক্ষ্যে জাতীয় পর্যায়ে প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা বৃদ্ধি অতি জরুরী। এ লক্ষ্যে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রনালয় সমূহের মধ্যে সমন্বয় সাধন করে পরিকল্পনা সংশ্লিষ্ট কর্মকান্ডকে শক্তিশালী করা দরকার।