Press Conference

02 Mar 2024

‘বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড এবং ভবনে জীবনের নিরাপত্তাঃ বিআইপি’র পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন

সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের নগর এলাকাসমূহে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়ে গেছে, ফলে জীবন ও সম্পদের অপূরণীয় ক্ষতি হচ্ছে। সঠিক নগর পরিকল্পনা, নিরাপদ ভবন নির্মাণ, উন্নয়ন ব্যবস্থাপনা ও সেবা সংস্থার জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে এ ধরনের অগ্নিকাণ্ড এড়ানো সম্ভব। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি) এর উদ্যোগে ২ মার্চ ২০২৪ তারিখে প্ল্যানার্স টাওয়ারে "বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড এবং ভবনে জীবনের নিরাপত্তাঃ বিআইপি’র পর্যবেক্ষণ ও প্রস্তাবনা" শীর্ষক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। বিআইপি সাধারণ সম্পাদক পরিকল্পনাবিদ শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসানের সঞ্চালনায় অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান মূল প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। তিনি জানান, বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনটির প্রথম থেকে পঞ্চম তলা বাণিজ্যিক ও ষষ্ঠ-সপ্তম তলা আবাসিক ব্যবহারের জন্য অনুমোদিত ছিল। রেস্তোরাঁ বা শোরুমের জন্য কোনো অনুমোদন ছিল না, যা ইমারত আইন ও নগর পরিকল্পনার ব্যত্যয়। অতীতের মতো এই অগ্নিকাণ্ডকেও হত্যাকাণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা উচিত। সংশ্লিষ্ট সংস্থা ও ব্যক্তির গাফিলতি ও উদাসীনতা না থামালে এর পুনরাবৃত্তি ঘটবে। সম্মেলনে বিআইপি’র সহ-সভাপতি পরিকল্পনাবিদ সৈয়দ শাহরিয়ার আমিন, পরিকল্পনাবিদ সাধারণ সম্পাদক শেখ মুহম্মদ মেহেদী আহসান, পরিকল্পনাবিদ যুগ্ম সম্পাদক তামজিদুল ইসলাম, ও কোষাধ্যক্ষ পরিকল্পনাবিদ ড. মোঃ মোসলেহ উদ্দীন হাসান বক্তব্য রাখেন।



সংবাদ সম্মেলনে বিআইপি সভাপতি পরিকল্পনাবিদ ড. আদিল মুহাম্মদ খান বেইলি রোডের অগ্নিকাণ্ড এবং ভবনে জীবনের নিরাপত্তার বিষয়ে নগর এলাকায় অগ্নি দূর্ঘটনা প্রতিরোধে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্স (বিআইপি)’র পক্ষ থেকে নিম্নোক্ত প্রস্তাবনা সমূহ উপস্থাপন করেনঃ

নগর ও কমিউনিটি ভিত্তিক প্রস্তাবনাঃ
১. নগর পরিকল্পনার মানদন্ড অনুযায়ী ঢাকা শহরে ভবনের সেটব্যাক তথা ভবনের পাশে রাখা বাধ্যতামূলক খালি জায়গার পরিমাণ নিয়ে নতুন করে ভাবতে হবে ও নির্মাণ বিধিমালার প্রয়োজনীয় সংশোধন আনতে হবে।
২. কমার্শিয়াল ভবনের অনুমতি নেয়ার ক্ষেত্রে F-1, F-2, F-3 ক্যাটাগরি রয়েছে কিন্তু ব্যবহার এর ক্ষেত্রে এর ব্যত্যয় দেখা যায় অনেক ক্ষেত্রেই।
৩. বিএনবিসিতে রেস্তোরাঁকে শিল্পের ক্যাটাগরিতে রাখা হয়েছে। কিন্তু রেস্তোরাঁর জন্য প্রস্তাবিত ইমারত নির্মাণ বিধিমালাতেই একটি আলাদা ক্যাটাগরি করা দরকার।
৪. রেস্তোরাঁসহ ভবনের বিভিন্ন মিশ্র ও বিপদজনক ব্যবহারের জন্য পরিকল্পনা অনুমোদন বা প্ল্যানিং এসেসমেন্ট রিপোর্ট বাধ্যতামূলক করা প্রয়োজন।

ভবন ভিত্তিক প্রস্তাবনাঃ
১. অনেক ভবন নিয়ম অনুযায়ী ২টি সিঁড়ি রাখলেও ফায়ার এক্সিটের সিঁড়িটা অনেকে গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করে। এক্ষেত্রে জরুরী বহির্গমনের সিঁড়ি অন্য কোন কাজে বা উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কর্তৃক নিরৎসাহিত করতে হবে।
২. অনেকেই ভবনের ব্যবহার পরিবর্তন করে অ-আবাসিক ক্যাটাগরিতে ফেলে। এই “অ-আবাসিক” নামের ব্যবহার করে আবাসিক ভবন বিভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে।

সুশাসন ভিত্তিক প্রস্তাবনাঃ
১. রাষ্ট্রের সংস্থাগুলো শক্তিশালী পেশিশক্তির কাছে নমনীয় হবার কারণে অনেক ভবনকে নিয়মের মধ্যে নিয়ে আসতে বা আইন প্রয়োগ করতে পারছে না। এক্ষেত্রে রাষ্ট্র যন্ত্রকে ভবন নির্মাণ ও ব্যবহার সম্পর্কিত আইন মানার বিষয়ে নিরপেক্ষভাবে জিরো-টলারেন্স নীতি অনুসরণ করতে হবে।
২. রাজউকের কাছে পূর্বের ডাটাবেজ রয়েছে যে কোন ভবন কোন ক্যাটাগরিতে পারমিশন নেওয়া আছে। সেই ডাটাবেজের মাধ্যমে এখনকার DAP কে যুক্ত করে যে সকল ভবন অনুমতি না নিয়ে ভিন্ন উদ্দেশ্যে ব্যবহার করছে সে সকল ভবনকে চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নেয়া যেতে পারে।
৩. বিদ্যমান আইনে প্লটের ব্যবহার পরিবর্তন করবার আইনি সুযোগ রয়েছে কিন্তু একবার বিল্ডিং হয়ে গেলে ভবনের ব্যবহার পরিবর্তন করলেই ভবনের নিরাপত্তা মারাত্মকভাবে ব্যত্যয় হয়। এক্ষেত্রে ভবনের ব্যবহার পরিবর্তন বা রূপান্তর করার বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে আরও কঠোর অবস্থান গ্রহণ করতে হবে।

অন্যান্য প্রস্তাবনাঃ
১. গ্যাস স্বল্পতার কারণে সরকার গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহারকে উৎসাহিত করছে, কিন্তু এদের ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনায় নিরাপত্তার পর্যাপ্ত ঘাটতি রয়েছে, যার কারণে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে। ফলে গ্যাস সিলিন্ডার ব্যবহার ও ব্যবস্থাপনার কার্যকর কৌশল, নজরদারি ও দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।
২. ঢাকা শহরের ভবনগুলোতে ফায়ার সেফটির জন্য ফায়ার ড্রিল করানোর উদ্যোগ নিতে হবে।
৩. বহুতল ও বিশেষ ব্যবহারের ভবনে অগ্নি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ফায়ার এক্সটিংগুইশার, ফায়ার এলার্ম এগুলো ছিল কিনা তা তদারকি করা প্রয়োজন। ভবনের সেফটি অডিট করানোর উদ্যোগ নিতে হবে।

এছাড়াও সংবাদ সম্মেলনে বিআইপি বোর্ড সদস্য পরিকল্পনাবিদ হোসনে আরা এবং পরিকল্পনাবিদ মোঃ ফাহিম আবেদীনসহ অন্যান্য পরিকল্পনাবিদ সদস্যগণ উপস্থিত ছিলেন।